ড. কামাল হোসেন

উন্নয়নের প্রবাদ পুরুষ

ড. কামাল হোসেন

আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কামরুল ইসলাম সিদ্দিক এক বিরল ব্যক্তিত্ব। প্রখর মেধাসস্পন্ন ও প্রচণ্ড আশাবাদী এক মানুষ ছিলেন জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক সফল রূপকার তিনি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি আমৃত্যু জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।

এই অদম্য গর্বিত সংগঠকের শূন্যস্থান অপূরণীয়। প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের চার দশকের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের কৃতিত্ব ও প্রাপ্তিসমূহের ফিরিস্তি দিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই আমি আমার স্মৃতিচারণামূলক লেখায় তার বৈচিত্র্যময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের খণ্ডাংশ উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক তার কর্মজীবন ওয়ার্কস প্রোগ্রামের উপ-প্রধান প্রকৌশলী, এলজিবি’র উপদেষ্টা এবং এলজিইডি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে যুদ্ধত্তোর বাংলাদেশে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। তার গতিশীল দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এলজিইডি আজ আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। তার কর্মদক্ষতায় আস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী এদেশের উন্নয়ন অবকাঠামোতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

১৯৯৯ সালে বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিন দশকের উপর বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখে উন্নয়নের প্রবাদ পুরুষে পরিণত হন। তিনি নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজের অবস্থানকে তুলে ধরেন।

কৃষিক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে ইরি চাষের মাধ্যমে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনার ধারণায় বাংলাদেশে বাবার ড্যাম (Rubber dam) স্থাপন করে এ প্রযুক্তিকে এদেশে জনপ্রিয় করে তোলেন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসমূহে বেইজ ম্যাপ তৈরি করে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) চালু করে এক তথ্যবিপ্লব সাধন করেন।

জাইকার সাহায্যপুষ্ট আদর্শ গ্রামীণ প্রকল্প (MRDP) সহ গ্রামীণ রাস্তা, সেতু ও সেচ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, সমাজ উন্নয়ন ও সমবায় ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন কর্মসূচির আওতায় প্রয়োজনীয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে তিনি সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন।

বিশ্বব্যাংক, এশীয়া উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, জেবিক, সৌদি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ওপেক ফান্ড এর সহায়তায় বহু প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দেন। আন্তর্জাতিক শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাইকা, ইউএসএইড, সিডা, এসডিসি, ড্যানিডা, নোরাড ও ইউএনডিপির সহায়তায় দেশের বহু উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেন।

অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সেমিনারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন দেশের স্বার্থে। উন্নয়নের বিভিন্ন শাখায় যেমন-কৃষি, পানিসম্পদ, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত ও পরিবহন, নবায়নযোগ্য এনার্জি, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় কাজ করে গেছেন।

ব্যক্তিজীবনে ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এ পৃথিবী থেকে প্রস্থানের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত কুষ্টিয়াস্থ দরবার শরীফ ও জামে মসজিদ এর প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

পরিবেশ, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রয়োজনে জনাব সিদ্দিক এর জীবন আমাদের, বিশেষভাবে আমাদের যুব সমাজের নিকট অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।